দ্বিতীয় অধ্যায়
সাংখ্যযোগ
সঞ্জয় ঊবাচ
অনুবাদঃ সঞ্জয় বললেন- অর্জুনকে এভাবে অনুতপ্ত, ব্যাকুল ও অশ্রুশিক্ত দেখে, কৃপায় আবিষ্ট হয়ে মধুসূদন বা শ্রীকৃষ্ণ এই কথাগুলি বললেন।
শ্রীভগবানুবাচ
অনার্যজুষ্টমস্বর্গ্যমকীর্তিকরমর্জুন ॥২॥
অনুবাদঃ পুরুষোত্তম শ্রীভগবান বললেন- প্রিয় অর্জুন, এই ঘোর সংঙ্কটময় যুদ্ধস্থলে যারা জীবনের প্রকৃত মূল্য বোঝে না, সেই সব অনার্যের মতো শোকানল তোমার হৃদয়ে কিভাবে প্রজ্জ্বলিত হল ? এই ধরনের মনোভাব তোমাকে স্বর্গলোকে উন্নীত করবে না, পক্ষান্তরে তোমার সমস্ত যশরাশি বিনষ্ট করবে।
ক্ষুদ্রং হৃদয়দৌর্বল্যং ত্যক্ত্বোত্তিষ্ঠ পরমন্তপ ॥৩॥
অনুবাদঃ হে পার্থ ! এই সন্মান হানিকর ক্লীবত্বের বশবর্তী হয়ো না৷ এই ধরনের আচরণ তোমার পক্ষে অনুচিত । হে পরন্তপ ! হৃদয়ের এই ক্ষুদ্র দুর্বলতা পরিত্যাগ করে তুমি উঠে দাঁড়াও।
অর্জুন উবাচ
ইষুভিঃ প্রতিযোৎস্যামি পূজার্হাবরিসূদন ॥৪॥
অনুবাদঃ অর্জুন বললেন- হে অরিসূদন ! হে মধুসূদন ! এই যুদ্ধক্ষেত্রে ভীষ্ম ও দ্রোণের মতো পরম পূজনীয় ব্যাক্তিদের কেমন করে আমি বাণের দ্বারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব ?
শ্রেয়ো ভোক্তুং ভৈক্ষ্যমপীহ লোকে ।
হত্বার্থকামাংস্তু গুরূনিহৈব
ভুঞ্জীয় ভোগান্ রুধিরপ্রদিগ্ধান্ ॥৫॥
অনুবাদঃ আমার মহানুভব শিক্ষাগুরুদের জীবন হানি করে এই জগৎ ভোগ করার থেকে বরং ভিক্ষা করে জীবন ধারণ করা ভাল। তাঁরা পার্থিব বস্তুর অভিলাষী হলেও আমার গুরুজন। তাঁদের হত্যা করা হলে, যুদ্ধলব্ধ সমস্ত ভোগ্যবস্তু তাঁদের রক্তমাখা হবে।
অনুবাদঃ তাদের জয় করা শ্রেয়, না তাদের দ্বারা পরাজিত হওয়া শ্রেয়, তা আমি বুঝতে পারছি না। আমরা যদি ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রদের হ্ত্যা করি, তাহলে আমাদের আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছা করবে না। তবুও এই রণাঙ্গনে তারা আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে ৷
পৃচ্ছামি ত্বাং ধর্মসম্মূঢ়চেতাঃ ।
যচ্ছ্রেয়ঃ স্যান্নিশ্চিতং ব্রুহি তন্মে
শিষ্যস্তেহহং শাধি মাং ত্বাং প্রপন্নম্ ॥৭॥
অনুবাদঃ কার্পণ্যজনিত দুর্বলতার প্রভাবে আমি এখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়েছি এবং আমার কর্তব্য সম্বন্ধে বিভ্রান্ত হয়েছি ৷এই অবস্থায় আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করছি, এখন কি করা আমার পক্ষে শ্রেয়স্কর, তা আমাকে বল। এখন আমি তোমার শিষ্য এবং সর্বতোভাবে তোমার শরণাগত ৷ দয়া করে তুমি আমাকে নির্দেশ দাও ।
অনুবাদঃ আমার ইন্দ্রিয়গুলিকে শুকিয়ে দিচ্ছে যে শোক, তা দূর করবার কোন উপায় আমি খুঁজে পাচ্ছি না ৷ এমন কি স্বর্গের দেবতাদের মতো আধিপত্য নিয়ে সমৃদ্ধিশালী, প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন রাজ্য এই পৃথিবীতে লাভ করলেও আমার এই শোকের বিনাশ হবে না।
সঞ্জয় উবাচ
ন য্যোৎস্য ইতি গোবিন্দমুক্ত্বা তূঞ্চীং বভূব হ ॥৯॥
অনুবাদঃ সঞ্জয় বললেন- এভাবে মনোভাব ব্যক্ত করে গুড়াকেশ অর্জুন তখন হৃষীকেশকে বললেন, “হে গোবিন্দ ! আমি যুদ্ধ করব না” , এই বলে তিনি মৌন হলেন।
অনুবাদঃ হে ভরতবংশীয় ধৃতরাষ্ট্র ! সেই সময় স্মিত হেসে, শ্রীকৃষ্ণ উভয় পক্ষের সৈন্যদের মাঝখানে বিষাদগ্রস্ত অর্জুনকে এই কথা বললেন।
অনুবাদঃ পরমেশ্বর ভগবান বললেন- তুমি প্রাজ্ঞের মতো কথা বলছ, অথচ যে বিষয়ে শোক করা উচিত নয়, সে বিষয়ে শোক করছ। যাঁরা যথার্থই পণ্ডিত তাঁরা কখনও জীবিত অথবা মৃত কারও জন্যই শোক করেন না।
ন চৈব ন ভবিষ্যামঃ সর্বে বয়মতঃপরম্ ॥১২॥
অনুবাদঃ এমন কোন সময় ছিল না যখন আমি, তুমি ও এই সমস্ত রাজারা ছিলেন না এবং ভবিষ্যতেও কখনও আমাদের অস্তিত্ব বিনষ্ট হবে না ।
অনুবাদঃ দেহীর দেহ যেভাবে কৌমার, যৌবন ও জরার মাধ্যমে তার রূপ পরিবর্তন করে চলে, মৃত্যুকালে তেমনই ঐ দেহী ( আত্মা ) এক দেহ থেকে অন্য কোন দেহে দেহান্তরিত হয়। স্থিতপ্রজ্ঞ পণ্ডিতেরা কখনও এই পরিবর্তনে মুহ্যমান হন না ।
অনুবাদঃ হে কৌন্তেয় ! ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয়ের সংযোগের ফলে অনিত্য সুখ ও দুঃখের অনুভব হয় ৷ সেগুলি ঠিক যেন শীত এবং গ্রীষ্ম ঋতুর গমনাগমনের মতো । হে ভরতকুল-প্রদীপ ! সেই ইন্দ্রিয়্জাত অনুভূতির দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে সেগুলি সহ্য করার চেষ্টা কর।
অনুবাদঃ হে পুরুষশ্রেষ্ঠ (অর্জুন) ! যে জ্ঞানী ব্যক্তি সুখ ও দুঃখকে সমান জ্ঞান করেন এবং শীত ও উষ্ণ আদি দ্বন্দ্বে বিচলিত হন না, তিনিই মুক্তি লাভের প্রকৃত অধিকারী।
অনুবাদঃ যাঁরা তত্ত্বদ্রষ্টা তাঁরা সিদ্ধান্ত করেছেন যে, অনিত্য জড় বস্তুর স্থায়িত্ব নেই এবং নিত্য বস্তু আত্মার কখনও বিনাশ হয় না। তাঁরা উভয় প্রকৃতির যথার্থ স্বরূপ উপলব্ধি করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।
অনুবাদঃ যা সমগ্র শরীরে পরিব্যাপ্ত হয়ে রয়েছে, তাকে তুমি অবিনাশী বলে জানবে৷ সেই অব্যয় আত্মাকে কেউ বিনাশ করতে সক্ষম নয়।
অনুবাদঃ অবিনাশী, অপরিমেয় ও শাশ্বত আত্মার জড় দেহ নিঃসন্দেহে বিনাশশীল৷ অতএব হে ভারত ! তুমি শাস্ত্রবিহিত স্বধর্ম পরিত্যাগ না করে যুদ্ধ কর।
অনুবাদঃ যিনি জীবাত্মাকে হন্তা বলে মনে করেন কিংবা যিনি একে নিহত বলে ভাবেন, তাঁরা উভয়েই আত্মার প্রকৃত স্বরূপ জানেনা না। কারণ আত্মা কাউকে হত্যা করেন না এবং কারও দ্বারা নিহতও হন না।
নায়ং ভূত্বা ভবিতা বা ন ভূয়ঃ ।
অজো নিত্যঃ শাশ্বতোহয়ং পুরাণো
ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে ॥২০॥
অনুবাদঃ আত্মার কখনও জন্ম হয় না বা মৃত্যু হয় না, অথবা পুনঃ পুনঃ তাঁর উৎপত্তি বা বৃদ্ধি হয় না৷ তিনি জন্মরহিত শাশ্বত, নিত্য এবং পুরাতন হলেও চিরনবীন। শরীর নষ্ট হলেও আত্মা কখনও বিনষ্ট হয় না।
অনুবাদঃ হে পার্থ ! যিনি এই আত্মাকে অবিনাশী, শাশ্বত, জন্মরহিত ও অক্ষয় বলে জানেন, তিনি কিভাবে কাউকে হত্যা করতে বা হত্যা করাতে পারেন ?
নবানি গৃহ্ণাতি নরোহপরাণি ।
তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণান্য-
ন্যানি সংযাতি নবানি দেহী ॥২২॥
অনুবাদঃ মানুষ যেমন জীর্ণ বস্ত্র পরিত্যাগ করে নতুন বস্ত্র পরিধান করে, দেহীও তেমনই জীর্ণ শরীর ত্যাগ করে নতুন দেহ ধারণ করেন।
অনুবাদঃ আত্মাকে অস্ত্রের দ্বারা কাটা যায় না, আগুনে পোড়ান যায় না, জলে ভেজানো যায় না, অথবা হাওয়াতে শুকানোও যায় না।
অনুবাদঃ এই আত্মা অচ্ছেদ্য, অদাহ্য, অক্লেদ্য ও অশোষ্য। তিনি চিরস্থায়ী, সর্বব্যপ্ত, অপরিবর্তনীয়, অচল ও সনাতন।
তস্মাদেবং বিদিত্বৈনং নানুশোচিতুমর্হসি ॥২৫॥
অনুবাদঃ এই আত্মা অব্যক্ত, অচিন্ত্য ও অবিকারী বলে শাস্ত্রে উক্ত হয়েছে। অতএব এই সনাতন স্বরূপ অবগত হয়ে দেহের জন্য তোমার শোক করা উচিত নয় ।
অনুবাদঃ হে মহাবাহো ! আর যদি তুমি মনে কর যে, আত্মার বারবার জন্ম হয় এবং মৃত্যু হয়, তা হলেও তোমার শোক করার কোন কারণ নেই।
অনুবাদঃ যার জন্ম হয়েছে তার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী এবং যার মৃত্যু হয়েছে তার জন্মও অবশ্যম্ভাবী। অতএব অপরিহার্য কর্তব্য সম্পাদন করার সময় তোমার শোক করা উচিত নয়।
অব্যক্তনিধনান্যেব তত্র কা পরিদেবনা ॥২৮॥
অনুবাদঃ হে ভারত ! সমস্ত সৃষ্ট জীব উৎপন্ন হওয়ার আগে অপ্রকাশিত ছিল, তাদের স্থিতিকালে প্রকাশিত থাকে এবং বিনাশের পর আবার অপ্রকাশিত হয়ে যায়। সুতরাং, সেই জন্য শোক করার কি কারণ ?
অনুবাদঃ কেউ এই আত্মাকে আশ্চর্যবৎ দর্শন করেন, কেউ আশ্চর্যভাবে বর্ণনা করেন এবং কেউ আশ্চর্য জ্ঞানে শ্রবণ করেন, আর কেউ শুনেও তাকে বুঝতে পারেন না।
অনুবাদঃ হে ভারত ! প্রাণীদের দেহে অবস্তিত আত্মা সর্বদাই অবধ্য। অতএব কোন জীবের জন্য তোমার শোক করা উচিত নয়।
অনুবাদঃ ক্ষত্রিয়রূপে তোমার স্বধর্ম বিবেচনা করে তোমার জানা উচিত যে, ধর্ম রক্ষার্থে যুদ্ধ করার থেকে ক্ষত্রিয়ের পক্ষে মঙ্গলকর আর কিছুই নেই। তাই, তোমার দ্বিধাগ্রস্থ হওয়া উচিত নয়।
অনুবাদঃ হে পার্থ ! স্বর্গদ্বার উন্মোচনকারী এই প্রকার ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সুযোগ না চাইতেই যে সব ক্ষত্রিয়ের কাছে আসে, তাঁরা সুখী হন।
অনুবাদঃ কিন্ত্ত, তুমি যদি এই ধর্মযুদ্ধ না কর, তা হলে তোমার স্বীয় ধর্ম এবং কীর্তি থেকে ভ্রষ্ট হয়ে পাপ ভোগ করবে।
অনুবাদঃ সমস্ত লোক তোমার কীর্তিহীনতার কথা বলবে এবং যে-কোন মর্যাদাবান লোকের পক্ষেই এই অসম্মান মৃত্যু অপেক্ষাও অধিকতর মন্দ।
অনুবাদঃ সমস্ত মহারথীরা মনে করবেন যে, তুমি ভয় পেয়ে যুদ্ধক্ষেত্র পরিত্যাগ করেছ এবং তুমি যাদের কাছে সম্মানিত ছিলে, তারাই তোমাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য জ্ঞান করবে।
অনুবাদঃ তোমার শত্রুরা তোমার সামর্থ্যের নিন্দা করে বহু অকথ্য কথা বলবে। তার চেয়ে অধিকতর দুঃখদায়ক তোমার পক্ষে আর কি হতে পারে ?
অনুবাদঃ হে কুন্তীপুত্র ! এই যুদ্ধে নিহত হলে তুমি স্বর্গ লাভ করবে, আর জয়ী হলে পৃথিবী ভোগ করবে ৷ অতএব যুদ্ধের জন্য দৃঢ়সংকল্প হয়ে উত্থিত হও।
ততো যুদ্ধায় যুজ্যস্ব নৈবং পাপমবাপ্স্যসি ॥৩৮॥
অনুবাদঃ সুখ-দুঃখ, লাভ-ক্ষতি ও জয়-পরাজয়কে সমান জ্ঞান করে তুমি যুদ্ধের নিমিত্ত যুদ্ধ কর, তা হলে তোমাকে পাপভাগী হতে হবে না।
বুদ্ধ্যা যুক্তো যয়া পার্থ কর্মবন্ধং প্রহাস্যসি ॥৩৯॥
অনুবাদঃ হে পার্থ ! আমি তোমাকে সাংখ্য-যোগের কথা বললাম ৷ এখন ভক্তিযোগ সম্বন্ধিনী বুদ্ধির কথা শ্রবণ কর, যার দ্বারা তুমি কর্মবন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারবে।
অনুবাদঃ ভক্তিযোগের অনুশীলন কখনও ব্যর্থ হয় না এবং তার কোনও ক্ষয় নেই। তার সল্প অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠাতাকে সংসাররূপ মহাভয় থেকে পরিত্রাণ করে।
বহুশাখা হ্যনন্তাশ্চ বুদ্ধয়োহব্যবসায়িনাম্ ॥৪১॥
অনুবাদঃ যারা এই পথ অবলম্বন করেছে তাদের নিশ্চয়াত্মিকা বুদ্ধি একনিষ্ঠ। হে কুরুনন্দন, অস্থিরচিত্ত সকাম ব্যক্তিদের বুদ্ধি বহু শাখাবিশিষ্ট ও বহুমুখী।
অনুবাদ (৪২-৪৩) : বিবেকবর্জিত লোকেরাই বেদের পুষ্পিত বাক্যে আসক্ত হয়ে স্বর্গসুখ ভোগ, উচ্চকুলে জন্ম, ক্ষমতা লাভ আদি সকাম কর্মকেই জীবনের চরম উদ্দেশ্য বলে মনে করে। ইন্দ্রিয়সুখ ভোগ ও ঐশ্বর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তারা বলে যে, তার ঊর্ধ্বে আর কিছুই নেই।
ব্যবসায়াত্মিকা বুদ্ধিঃ সমাধৌ ন বিধীয়তে ॥৪৪॥
অনুবাদঃ যারা ভোগ ও ঐশ্বর্যসুখে একান্ত আসক্ত, সেই সমস্ত বিবেকবর্জিত মূঢ় ব্যক্তিদের বুদ্ধি সমাধি অর্থাৎ ভগবানে একনিষ্ঠতা লাভ হয় না।
অনুবাদঃ বেদে প্রধানত জড়া প্রকৃতির তিনটি গুণ সম্বন্ধেই আলোচনা করা হয়েছে। হে অর্জুন ! তুমি সেই গুণগুলিকে অতিক্রম করে নির্গুণস্তরে অধিষ্ঠিত হও। সমস্ত দন্দ্ব থেকে মুক্ত হও এবং লাভ-ক্ষতি ও আত্মরক্ষার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে অধ্যাত্ম চেতনায় অধিষ্ঠিত হও।
অনুবাদঃ ক্ষুদ্র জলাশয়ে যে সমস্ত প্রয়োজন সাধিত হয়, সেগুলি বৃহৎ জলাশয় থেকে আপনা হতেই সাধিত হয়ে যায়। তেমনই, ভগবানের উপাসনার মাধ্যমে যিনি পরব্রহ্মের জ্ঞান লাভ করে সব কিছুর উদ্দেশ্য উপলব্ধি করেছেন, তাঁর কাছে সমস্ত বেদের উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছে।
অনুবাদঃ স্বধর্ম বিহিত কর্মে তোমার অধিকার আছে, কিন্তু কোন কর্মফলে তোমার অধিকার নেই। কখনও নিজেকে কর্মফলের হেতু মনে করো না, এবং কখনও স্বধর্ম আচরণ না করার প্রতিও আসক্ত হয়ো না।
সিদ্ধ্যসিদ্ধ্যোঃ সমো ভূত্বা সমত্বং যোগ উচ্যতে ॥৪৮॥
অনুবাদঃ হে অর্জুন ! ফলভোগের কামনা পরিত্যাগ করে ভক্তিযোগস্থ হয়ে স্বধর্ম-বিহিত কর্ম আচরণ কর। কর্মের সিদ্ধি ও অসিদ্ধি সম্বন্ধে যে সমবুদ্ধি, তাকেই যোগ বলা হয়।
বুদ্ধৌ শরণমন্বিচ্ছ কৃপণাঃ ফলহেতবঃ ॥৪৯॥
অনুবাদঃ হে ধনঞ্জয় ! বুদ্ধিযোগ দ্বারা ভক্তির অনুশীলন করে সকাম কর্ম থেকে দূরে থাক এবং সেই চেতনায় অধিষ্ঠিত হয়ে ভগবানের শরণাগত হও ৷ যারা তাদের কর্মের ফল ভোগ করতে চায়, তারা কৃপণ।
অনুবাদঃ যিনি ভগবদ্ভক্তির অনুশীলন করেন, তিনি এই জীবনেই পাপ ও পুণ্য উভয় থেকেই মুক্ত হন। অতএব, তুমি নিষ্কাম কর্মযোগের অনুষ্ঠান কর৷ সেটিই হচ্ছে সর্বাঙ্গীণ কর্মকৌশল।
অনুবাদঃ মনীষিগণ ভগবানের সেবায় যুক্ত হয়ে কর্মজাত ফল ত্যাগ করে জন্ম-মৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্ত হন। এভাবে তাঁরা সমস্ত দুঃখ-দুর্দশার অতীত অবস্থা লাভ করেন।
অনুবাদঃ এভাবে পরমেশ্বর ভগবানে অর্পিত নিষ্কাম কর্ম অভ্যাস করতে করতে য্খন তোমার বুদ্ধি মোহরূপ গভীর অরণ্যকে সম্পূর্ণরূপে অতিক্রম করবে, তখন তুমি যা কিছু শুনেছ এবং যা কিছু শ্রবণীয়, সেই সবের প্রতি সম্পূর্ণরূপে নিরপেক্ষ হতে পারবে।
সমাধাবচলা বুদ্ধিস্তদা যোগমবাপ্স্যসি ॥৫৩॥
অনুবাদঃ তোমার বুদ্ধি যখন বেদের বিচিত্র ভাষার দ্বারা আর বিচলিত হবে না এবং আত্ম-উপলদ্ধির সমাধিতে স্থির হবে, তখন তুমি দিব্যজ্ঞান লাভ করে ভক্তিযোগে অধিষ্ঠিত হবে।
অর্জুন উবাচ
অনুবাদঃ অর্জুন জিজ্ঞাসা করলেন- হে কেশব ! স্থিতপ্রজ্ঞ অর্থাৎ অচলাবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের লক্ষণ কি ? তিনি কিভাবে কথা বলেন, কিভাবে অবস্থান করেন এবং কিভাবেই বা তিনি বিচরণ করেন ?
শ্রীভগবানুবাচঃ
আত্মন্যেবাত্মনা তুষ্টঃ স্থিতপ্রজ্ঞস্তদোচ্যতে ॥৫৫॥
অনুবাদঃ পরমেশ্বর ভগবান বললেন– হে পার্থ ! জীব যখন মানসিক জল্পনা-কল্পনা থেকে উদ্ভূত সমস্ত মনোগত কাম পরিত্যাগ করে এবং তার মন যখন এভাবে পবিত্র হয়ে আত্মাতেই পূর্ণ পরিতৃপ্তি লাভ করে, তখনই তাকে স্থিতপ্রজ্ঞ বলা হয়।
বীতরাগভয়ক্রোধঃ স্থিতধীর্মুনিরুচ্যতে ॥৫৬॥
অনুবাদঃ ত্রিতাপ দুঃখ উপস্থিত হলেও যাঁর মন উদ্বিগ্ন হয় না, সুখ উপস্থিত হলেও যাঁর স্পৃহা হয় না এবং যিনি রাগ, ভয় ও ক্রোধ থেকে মুক্ত, তিনিই স্থিতধী অর্থাৎ স্থিতপ্রজ্ঞ।
অনুবাদঃ জড় জগতে যিনি সমস্ত জড় বিষয়ে আসক্তি রহিত, যিনি প্রিয় বস্তু লাভে আনন্দিত হন না এবং অপ্রিয় বিষয় উপস্থিত হলে দ্বেষ করেন না, তিনি পূর্ণ জ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
অনুবাদঃ কূর্ম যেমন তার অঙ্গসমূহ তার কঠিন বহিরাবরণের মধ্যে সঙ্কুচিত করে, তেমনই যে ব্যক্তি তাঁর ইন্দ্রিয়গুলিকে ইন্দ্রিয়ের বিষয় থেকে প্রত্যাহার করে নিতে পারেন, তাঁর চেতনা চিন্ময় জ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত।
রসবর্জং রসোহপ্যস্য পরং দৃষ্ট্বা নিবর্ততে ॥৫৯॥
অনুবাদঃ দেহবিশিষ্ট জীব ইন্দ্রিয় সুখ ভোগ থেকে নিবৃত হতে পারে, কিন্তু তবুও ইন্দ্রিয় সুখ ভোগের আসক্তি থেকে যায়। কিন্তু উচ্চতর স্বাদ আস্বাদন করার ফলে তিনি সেই বিষয়তৃষ্ণা থেকে চিরতরে নিবৃত্ত হন।
ইন্দ্রিয়াণি প্রমাথীনি হরন্তি প্রসভং মনঃ ॥৬০॥
অনুবাদঃ হে কৌন্তেয় ! ইন্দ্রিয়সমূহ এতই বলবান এবং ক্ষোভকারী যে, তারা অতি যত্নশীল বিবেকসম্পন্ন পুরুষের মনকেও বলপূর্বক বিষয়াভিমুখে আকর্ষণ করে।
বশে হি যস্যেন্দ্রিয়াণি তস্য প্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠিতা ॥৬১॥
অনুবাদঃ যিনি তাঁর ইন্দ্রিয়গুলিকে সম্পূর্ণরূপে সংযত করে আমার প্রতি উত্তমা ভক্তিপরায়ণ হয়ে তাঁর ইন্দ্রিয়গুলিকে সম্পূর্ণরূপে বশীভূত করেছেন, তিনিই স্থিতিপ্রজ্ঞ।
সঙ্গাৎ সঞ্জায়তে কামঃ কামাৎ ক্রোধোহভিজায়তে ॥৬২॥
ক্রোধাদ্ ভবতি সম্মোহঃ সম্মোহাৎ স্মৃতিবিভ্রমঃ ।
স্মৃতিভ্রংশাদ্ বুদ্ধিনাশো বুদ্ধিনাশাৎ প্রণশ্যতি ॥৬৩॥
অনুবাদ (৬২-৬৩) : ইন্দ্রিয়ের বিষয়সমূহ সম্বন্ধে চিন্তা করতে করতে মানুষের তাতে আসক্তি জন্মায়, আসক্তি থেকে কাম উৎপন্ন হয় এবং কামনা থেকে ক্রোধ উৎপন্ন হয় । ক্রোধ থেকে সম্মোহ, সম্মোহ থেকে স্মৃতিবিভ্রম, স্মৃতিবিভ্রম থেকে বুদ্ধিনাশ এবং বুদ্ধিনাশ হওয়ার ফলে সর্বনাশ হয়। অর্থাৎ, মানুষ পুনরায় জড় জগতের অন্ধকূপে অধঃপতিত হয়।
অনুবাদঃ সংযতচিত্ত মানুষ প্রিয় বস্তুতে স্বাভাবিক আসক্তি ও অপ্রিয় বস্তুতে স্বাভাবিক বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হয়ে, তাঁর বশীভূত ইন্দ্রিয়ের দ্বারা ভগবদ্ভক্তির অনুশীলন করে ভগবানের কৃপা লাভ করেন।
প্রসন্নচেতসো হ্যাশু বুদ্ধিঃ পর্যবতিষ্ঠতে ॥৬৫॥
অনুবাদঃ চিন্ময় চেতনায় অধিষ্ঠিত হওয়ার ফলে তখন আর জড় জগতের ত্রিতাপ দুঃখ থাকে না ; এভাবে প্রসন্নতা লাভ করার ফলে বুদ্ধি শীঘ্রই স্থির হয়।
ন চাভাবয়তঃ শান্তিরশান্তস্য কুতঃ সুখম্ ॥৬৬॥
অনুবাদঃ যে ব্যক্তি কৃষ্ণ ভাবনায় যুক্ত নয়, তার চিত্ত সংযত নয় এবং তার পারমার্থিক বুদ্ধি থাকতে পারে না। আর পরমার্থ চিন্তাশূন্য ব্যক্তির শান্তি লাভের কোন সম্ভাবনা নেই৷এই রকম শান্তিহীন ব্যক্তির প্রকৃত সুখ কোথায় ?
তদস্য হরতি প্রজ্ঞাং বায়ুর্নাবমিবাম্ভসি ॥৬৭॥
অনুবাদঃ প্রতিকূল বায়ু নৌকাকে যেমন অস্থির করে, তেমনই সদা বিচরণকারী যে কোন একটি মাত্র ইন্দ্রিয়ের আকর্ষণেও মন অসংযত ব্যক্তির প্রজ্ঞাকে হরণ করতে পারে।
ইন্দ্রিয়াণীন্দ্রিয়ার্থেভ্যস্তস্য প্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠিতা ॥৬৮॥
অনুবাদঃ সুতরাং, হে মহাবাহো ! যাঁর ইন্দ্রিয়গুলি ইন্দ্রিয়ের বিষয় থেকে সর্বপ্রকারে নিবৃত্ত হয়েছে, তিনিই স্থিতপ্রজ্ঞ।
যস্যাং জাগ্রতি ভূতানি সা নিশা পশ্যতো মুনেঃ ॥৬৯॥
অনুবাদঃ সমস্ত জীবের পক্ষে যা রাত্রিস্বরূপ, স্থিতপ্রজ্ঞ সেই রাত্রিতে জাগরীত থেকে আত্ম-বুদ্ধিনিষ্ঠ আনন্দকে সাক্ষাৎ অনুভব করেন। আর যখন সমস্ত জীবেরা জেগে থাকে, তত্ত্বদর্শী মুনির নিকট তা রাত্রিস্বরূপ।
সমুদ্রমাপঃ প্রবিশন্তি যদ্বৎ ।
তদ্বৎ কামা যং প্রবিশন্তি সর্বে
সঃ শান্তিমাপ্নোতি ন কামকামী ॥৭০॥
অনুবাদঃ বিষয়কামী ব্যক্তি কখনো শান্তি লাভ করে না। জলরাশি যেমন সদা পরিপূর্ণ এবং স্থির সমুদ্রে প্রবেশ করেও তাকে ক্ষোভিত করতে পারে না, কামসমূহও তেমন স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তিতে প্রবিষ্ট হয়েও তাঁকে বিক্ষুব্ধ করতে পারে না, অতএব তিনিই শান্তি লাভ করেন৷
নির্মমো নিরহঙ্কারঃ স শান্তিমধিগচ্ছতি ॥৭১॥
অনুবাদঃ যে ব্যক্তি সমস্ত কামনা-বাসনা পরিত্যাগ করে জড় বিষয়ের প্রতি নিস্পৃহ, নিরহঙ্কার ও মমত্ত্ববোধ রহিত হয়ে বিচরণ করেন, তিনিই প্রকৃত শান্তি লাভ করে।
স্থিত্বাস্যামন্তকালেহপি ব্রহ্মনির্বাণমৃচ্ছতি ॥৭২॥
অনুবাদঃ এই প্রকার স্থিতিকেই ব্রাহ্মীস্থিতি বলে। হে পার্থ ! যিনি এই স্থিতি লাভ করেন, তিনি মোহপ্রাপ্ত হন না । জীবনের অন্তিম সময়ে এই স্থিতি লাভ করে, তিনি এই জড় জগতের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে ভগবৎ-ধামে প্রবেশ করেন।
ওঁ তৎসদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষৎসু ব্রহ্মবিদ্যায়াং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে ‘সাংখ্যযোগো’ নাম দ্বিতীয়োঽধ্যায়ঃ
🙏
শ্রীমদ্ভগবত গীতার দ্বিতীয় অধ্যায় – সাংখ্যযোগ এর সার-সংক্ষেপ
শ্রীমদ্ভগবত গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ে মূলত: আত্মতত্ত্ব বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনা করা হয়েছে জ্ঞান, কর্ম ও ভক্তির বিষয়েও। ভক্তি, কর্ম ও জ্ঞান এ তিনটি বিষয়কে যে ভাবে গীতায় সমন্বয় করা হয়েছে তা অন্য কোন গ্রন্থে পাওয়া যাবে না। আর সমন্বয়ই হচ্ছে গীতর ধর্ম। তাই বলা হয়ে থাকে গীতার জ্ঞান আহরণ করলে আর কোন গ্রন্থের প্রয়োজনীতা নেই। ১ শ্লোকে অর্জুনের মোহ। ২-৩ শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সংক্ষেপে উত্তর। ৪-৮ শ্লোকে শ্লোকে যুদ্ধ না করার পক্ষে অর্জুনের যুক্তি। ১১-৩০ শ্লোকে দেহের বিনাশ, আত্মার অবিনাশিতা সর্ম্পকে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। ৩১-৩৭ শ্লোকে যুদ্ধ করার পক্ষে অর্জুনকে উপদেশ। ৩৮-৫৩ শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে সর্বপ্রকার দ্বন্দ্ব হতে মুক্ত হয়ে ‘যোগস্থ’ হয়ে অর্থাৎ নিষ্কামভাবে কর্ম করার জন্য উপদেশ দিচ্ছেন। ৫৪-৬৩ শ্লোকে স্থিতপ্রজ্ঞের লক্ষ্মণসমূহ বর্ণনা করেছেন। ৬৩-৭২ শ্লোকে যোগস্থ হয়ে কর্ম করার ফলে কর্মির মন যখন পরমেশ্বর ভগবানে সমাহিত হয় তখন এ অবস্থাকে বলা ব্রাহ্মীস্থিতি। আর এ হচ্ছে মোক্ষলাভ।কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধক্ষেত্রে বিপক্ষের সৈন্যদলে পিতৃব্য, পিতামহ, আচার্য, মাতুল, শ্বশুর, ভ্রাতা, পুত্র, পৌত্র ও বন্ধুবান্ধন সকলকে দেখে অর্জুনে হৃদয় শোকাকুল হল। তিনি স্থির করলেন- গুরুজন ও আত্মীয়স্বজনদের বধ করবেন না। শ্রীকৃষ্ণ বললেন- অর্জুনের এ শোক অজ্ঞানপ্রসূত। এ শোক দূর করার জন্য তিনি অর্জুনকে আত্মতত্ত্ব ও কর্মযোগ সম্পন্ধে উপদেশ দিলেন।শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বুঝাতে চাচ্ছেন যে বিষয়ে তুমি শোক করছি সে বিষয়ে তোমার শোক করা উচৎ নয়। কারণ যারা স্থিতপ্রজ্ঞ তারা কোন প্রাণির বিনাশে শোক করে না। কারণ তারা জানে আত্মার মুক্তির জন্য দেহত্যাগ। আত্মা নিত্য। তার কোন ধ্বংস নেই। যুদ্ধ করলে আত্মীয়স্বজনগণকে বধ করতে হবে-এটিই হচ্ছে অর্জুনের শোকের প্রধান কারণ। আত্মার জন্ম নেই, মৃত্যু নেই,ক্ষয় নেই, বিনাশ নেই। আত্মাকে আগুনের পোড়ানো যায় না,জলে ভিজানো যায় না, রৌদ্রে শুকানো যায় না, অস্ত্র দিয়ে কাটা যায় না, বাতাসে উড়ানো যায় না। আত্মা নিত্য অবিনাশী ও সর্বব্যাপী। মানুষ দেহত্যাগ করলে বা হত্যা করলে তার শরীরটা নষ্ট হয়, আত্মা নষ্ট হয় না। আত্মা শুধু এক দেহ হতে অন্য দেহ ধারণ করে। মানুষ যেমন জীর্ণ বস্ত্র ত্যাগ করে নতুন বস্ত্র পরিধাণ করে কাপড় আত্মাও তেমনি জীর্ণ শরীর ত্যাগ করে নতুন দেহ ধারণ করে। শুধু দেহের রুপান্তর হয় মাত্র। আর এ হচেছ জন্মান্তর বা পুনর্জন্ম। জন্মান্তর বা পুনর্জন্মে আত্মা ঠিকই থাকেন, পরিবর্তন হয় ধু দেহটার। দেহ নশ্বর। এর বিনাশ অবশ্যম্ভাবী। পূর্বজন্মে ও পরজন্মের বৃত্তান্ত সকলে বুঝতে পারে না। বর্তমান জন্মের কথা কিন্তু সকলেই বুঝতে পারে। আত্মার প্রকৃত স্বরুপ কেউ জানেন না। সকলেই আত্মাকে আশ্চর্য কিছু মনে করে। এ হচ্ছে আত্মতত্ত্ব। দেহ নশ্বর ও আত্মা অবিনাশী। এটাই আত্মাতত্ত্বের মূল কথা। কর্ম দুই প্রকার। সকাম কর্ম ও নিষ্কাম কর্ম। ফল পাওয়ার আশায় যে কর্ম তা সকাম কর্ম। আর ফল আশা না করে যে কর্ম তা নিষ্কাম কর্ম। সকাম কর্মের ফল অতিদ্রুত লাভ করা যায়। কিন্তু এ কর্মে আবদ্ধ হওয়ায় ফলে জীব পুন: পুন: জন্ম গ্রহণ করে কষ্ট ভোগ করতেই থাকে। পক্ষান্তরে নিষ্কামভাবে কর্ম করার ফলে যোগীর কামনা-বাসনা দূরীভূত হয়ে পরমেশ্বর ভগবানে মন স্থির হয়। আর স্থিরবুদ্ধি যোগী কর্ম করেও কর্মে আবদ্ধ হন না। মৃত্যুর পর তিনি মুক্তি লাভ করেন। অর্থাৎ আর তাকে জন্মগ্রহণ করতে হয় না। ফলের আশা পরিত্যাগ করে তুমি নিষ্কামভাবে কর্ম কর। তুমি যুদ্ধ কর। ভগবানের সৃষ্টি রক্ষার জন্য তুমি যুদ্ধ কর। এ যুদ্ধে মানুষ হত্যা করলেও তোমাকে পাপ ভাগী হতে হবে না। তুমি ক্ষত্রিয়। যুদ্ধ করা ক্ষত্রিয়ের কর্তব্য। যুদ্ধ না করলে লোকে তোমাকে তুচ্ছ্যতাচ্ছিল্য করবে। তোমার দুর্নাম রটাবে।