সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গীতার ধ্যান (মঙ্গলাচারণ)

গীতার ধ্যান (মঙ্গলাচারণ)

ওঁ পার্থায় প্রতিবোধিতাং ভগবতা নারায়ণেন স্বয়ম্
ব্যাসেন গ্রথিতাং পুরাণমুনিনা মধ্যে মহাভারতম্৷
অদ্বৈতামৃতবর্ষিণীং ভগবতীমষ্টাদশাধ্যায়িনীম্
অম্ব ত্বামনুসন্দধামি ভগবদ্ গীতে ভবদ্বেষিণীম্ ॥১॥

সরলার্থ:- হে জননি ভগবদ্ গীতে মহাভারতের মধ্যে প্রাচীন মুনি ব্যাসদেবকর্তৃক গ্রথিত, স্বয়ং ভগবান নারায়ণকর্তৃক পার্থকে উপলক্ষ্য করে সম্যক্ রূপে বিজ্ঞাপিত, পুনর্জন্মনাশকারিণী অদ্বৈত তত্ত্বরূপ-অমৃতবর্ষিণী অষ্টাদশ-অধ্যায়রূপিণী ভগবতী তোমাকে আমি মনে মনে চিন্তা করিতেছি

নমোহস্তু তে ব্যাস বিশালবুদ্ধে ফুল্লারবিন্দায়্তপত্রনেত্র৷
যেন ত্বয়া ভারততৈলপূর্ণঃ প্রজ্বালিতো জ্ঞানময়ঃ প্রদীপঃ ॥২॥

সরলার্থ:- হে বিকশিত পদ্মপত্রের ন্যায় চক্ষুবিশিষ্ট মহাবুদ্ধি ব্যাসদেব, তোমায় নমস্কার, তোমাকর্তৃক মহাভারতরূপ তৈলদ্বারা পরিপূর্ণ জ্ঞানময় প্রদীপ প্রজ্বালিত হয়েছে

প্রপন্ন পারিজাতায় তোত্রবেত্রৈকপাণয়ে৷
জ্ঞানমুদ্রায় কৃষ্ণায় গীতামৃতদুহে নমঃ ॥৩॥

সরলার্থ:- শরণাগতের পক্ষে পারিজাত (কল্পবৃক্ষ) তুল্য, অশ্বচালনার জন্য এক হস্তে চাবুক ও লাগামধারী, জ্ঞানমুদ্রাবিশিষ্ট-হস্ত [অর্জুনকে উপদেশ দিবার জন্য তর্জনী ও অঙ্গুষ্ঠাঙ্গুলি মিলিত করে যে মুদ্রা তা-ই জ্ঞানমুদ্রা ], গীতারূপ অমৃত দোহনকারী শ্রীকৃষ্ণকে নমস্কার

সর্বোপনিষদো গাবো দোগ্ধা গোপালনন্দনঃ
পার্থো বৎসঃ সুধীর্ভোক্তা দুগ্ধং গীতামৃতং মহৎ ॥৪॥

সরলার্থ:- উপনিষদসকল গাভীস্বরূপ গোপালনন্দন শ্রীকৃষ্ণ দোহনকর্তা, অর্জুন বৎস (বাছুর) তুল্য, গীতার অমৃতরূপ বাণী উৎকৃষ্ট দুগ্ধসদৃশ, পণ্ডিতব্যক্তিগণ এ দুগ্ধ পানকর্তা

বসুদেবসুতং দেবং কংসচাণূরমর্দনম্৷
দেবকীপরমানন্দং কৃষ্ণং বন্দে জগদ্ গুরুম্ ॥৫॥

সরলার্থ:- বসুদেবের পুত্র, কংস ও চাণূর দৈত্যের বিনাশকারী, দেবকীর পরম আনন্দপ্রদ, জগদ্ গুরু দীপ্তিমান্ শ্রীকৃষ্ণকে বন্দনা করি

ভীষ্মদ্রোণতটা জয়দ্রথজলা গান্ধারনীলোপলা
শল্যগ্রাহবতী কৃপেণ বহনী কর্ণেন বেলাকুলা৷
অশ্বথামবিকর্ণঘোরমকরা দুর্যোধনাবর্তিনী
সৌত্তীর্ণা খলু পাণ্ডবৈ রণনদী কৈবর্তকে কেশবে॥৬॥

সরলার্থ:- ভীষ্ম ও দ্রোণ যে যুদ্ধরূপ নদের তট, জয়দ্রথ যার জল, গান্ধার (গান্ধার-রাজ-শকুনী) যাতে পিচ্ছিল নীলপ্রস্তর, শল্য যাতে কুমীর, কৃপাচার্য যাতে প্রবাহস্বরূপ, কর্ণ যার তীরপ্লাবী তরঙ্গ, অশ্বথামা ও বিকর্ণ যাতে ভীষণ মকরসদৃশ, দুর্যোধন যার আবর্ত সেই রণনদী কেশব কর্ণধার হওয়ায় পাণ্ডবেরা নিশ্চিতরূপে উত্তীর্ণ হয়েছে ॥৬॥

পারাশর্যবচঃসরোজমমলং গীতার্থগন্ধোৎকটং
নানাখ্যানককেশরং হরিকথাসম্বোধনাবধিতম্ ৷
লোকে সজ্জনষট্ পদৈরহরহঃ পেপীয়মানং মুদা
ভূয়াদ্ভারতপঙ্কজং কলিমলপ্রধ্বংসি নঃ শেয়সে ॥৭॥

সরলার্থ:- অমল কলিকলুষনাশক গীতার উপদেশরূপ সুগন্ধযুক্ত, নানা আখ্যানরূপ কেশরবিশিষ্ট, শ্রীকৃষ্ণের বাণীদ্বারা প্রবোধিত, জগতে সর্বদা সজ্জনরূপ ভ্রমরগণ কর্তৃক সানন্দে পুনঃপুনঃ পীয়্মান, পরাশরনন্দন বেদব্যাসের বাক্য-সরোবরে উৎপন্ন মহাভারতরূপ পদ্ম আমাদের কল্যাণের নিমিত্ত হোক

মূকং করোতি বাচালং পঙ্গুং লঙ্ঘয়তে গিরিম্৷
যৎকৃপা তমহং বন্দে পরমানন্দমাধবম্ ॥৮॥

সরলার্থ:- যাঁর কৃপা বোবাকে বাচাল করে, পঙ্গুকে পর্বত অতিক্রম করায়, সেই পরমানন্দ মাধবকে আমি বন্দনা করি

যং ব্রহ্মাবরুণেন্দ্ররুদ্রমরুতঃ স্তুন্বন্তি দিব্যৈইঃ স্তবৈ-
র্বেদ্যৈইঃ সাঙ্গপদক্রমোপনিষদৈর্গায়ন্তি যং সামগাঃ
ধ্যানাবস্থিত-তদ্ গতেন মনসা পশ্যন্তি যং যোগিনো
যস্যান্তং ন বিদুঃ সুরগণা দেবায় তস্মৈ নমঃ ॥৯॥

সরলার্থ:- ব্রহ্মা, বরুণ, ইন্দ্র, রুদ্র, ও মরুৎগণ দিব্য স্তবদ্বারা যাঁকে স্তুতি করেন, সামবেদগায়কগণ অঙ্গ, পদক্রম ও উপনিষদসহ সমগ্র বেদদ্বারা যাঁর স্তুতিগান করেন, যোগিগণ ধ্যানাবস্থিত তদ্ গতচিত্তে যাঁকে দর্শন করেন, দেবতা ও অসুরগণ যাঁর শেষ জানেন না, সেই দেবতাকে নমস্কার

ইতি শ্রীমদ্ভগবগীতা-মঙ্গলধ্যানং সমাপ্তম্৷

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ত্রয়োদশ অধ্যায় - ক্ষেত্রক্ষেত্রজ্ঞবিভাগযোগ [সংস্কৃত ও বঙ্গানুবাদ]

ত্রয়োদশ অধ্যায় ক্ষেত্রক্ষেত্রজ্ঞবিভাগযোগ অর্জুন উবাচ প্রকৃতিং পুরুষং চৈব ক্ষেত্রং ক্ষেত্রজ্ঞমেব চ । এতদ্ বেদিতু্মিচ্ছামি জ্ঞানং জ্ঞেয়ং চ কেশব ॥১॥ অনুবাদঃ অর্জুন বলিলেন- হে কেশব! আমি প্রকৃতি, পুরুষ, ক্ষেত্র, ক্ষেত্রজ্ঞ, জ্ঞান ও জ্ঞেয়- এই সমস্ত তত্ত্ব জানতে ইচ্ছা করি। শ্রীভগবানুবাচ ইদং শরীরং কৌন্তেয় ক্ষেত্রমিত্যভিধীয়তে । এতদ্ যো বেত্তি তং প্রাহুঃ ক্ষেত্রজ্ঞ ইতি তদ্বিদঃ ॥২॥ অনুবাদঃ পরমেশ্বর ভগবান বললেন- হে কৌন্তেয় ! এই শরীর ক্ষেত্র নামে অভিহিত এবং যিনি এই শরীরকে জানেন, তাঁকে ক্ষেত্রজ্ঞ বলা হয়। ক্ষেত্রজ্ঞং চাপি মাং বিদ্ধি সর্বক্ষেত্রেষু ভারত । ক্ষেত্রক্ষেত্রজ্ঞয়োর্জ্ঞানং যত্তজ্ জ্ঞানং মতং মম ॥৩॥ অনুবাদঃ হে ভারত ! আমাকেই সমস্ত ক্ষেত্রের ক্ষেত্রজ্ঞ বলে জানবে এবং ক্ষেত্র ও ক্ষেত্রজ্ঞ সম্বন্ধে যে জ্ঞান, সেই জ্ঞানই আমার অভিমত। তৎ ক্ষেত্রং যচ্চ যাদৃক্ চ যদ্বিকারি যতশ্চ যৎ । স চ যো যৎপ্রভাবশ্চ তৎ সমাসেন মে শৃণু ॥৪॥ অনুবাদঃ সেই ক্ষেত্র কি, তার কি প্রকার, তার বিকার কি, তা কার থেকে উৎপন্ন হয়েছে, সেই ক্ষেত্রজ্ঞের স্বরূপ কি এবং তার প্রভাব কি, সেই সব সংক্ষেপে আমার কাছে শ্রবণ কর। ঋষিভির্বহু...

সপ্তদশ অধ্যায় - শ্রদ্ধাত্রয়-বিভাগ-যোগ [সংস্কৃত ও বঙ্গানুবাদ]

সপ্তদশ অধ্যায় শ্রদ্ধাত্রয়-বিভাগ-যোগ অর্জুন উবাচ যে শাস্ত্রবিধিমুৎসৃজ্য যজন্তে শ্রদ্ধয়ান্বিতাঃ।  তেষাং নিষ্ঠা তু কা কৃষ্ণ সত্ত্বমাহো রজস্তমঃ।।১।। অনুবাদঃ  অর্জুন জিজ্ঞাসা করলেন- হে কৃষ্ণ! যারা শাস্ত্রীয় বিধান পরিত্যাগ করে শ্রদ্ধা সহকারে দেব-দেবীর পূজা করে, তাদের সেই নিষ্ঠা কি সাত্ত্বিক, রাজসিক না তামসিক?।

প্রথম অধ্যায় - অর্জুনবিষাদ যোগ [সংস্কৃত ও বঙ্গানুবাদ]

প্রথম অধ্যায় অর্জুন বিষাদ যোগ ধৃতরাষ্ট্র উবাচ ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে সমবেতা যুযুৎসবঃ । মামকাঃ পাণ্ডবাশ্চৈব কিমকুর্বত সঞ্জয় ॥১॥ অনুবাদ : ধৃতরাষ্ট্র জিজ্ঞাসা করলেন- হে সঞ্জয় ! ধর্মক্ষেত্রে যুদ্ধ করার মানসে সমবেত হয়ে আমার পুত্র এবং পান্ডুর পুত্রেরা তারপর কি করল ?