ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়
অর্থ: শৌনক ঋষি বললেন, হে সূত, পুরাকালে নারায়্ণ ক্ষেত্রে মহামুনি ব্যাস-কথিত গীতামাহাত্ম্য আমাকে বলুন৷
অর্থ: সূত গোস্বামী বললেন, হে ভগবন্, আপনি উত্তম জিজ্ঞাসা করেছেন৷ যা পরম গোপনীয়্তম সেই উত্তম গীতামাহাত্ম্য কে বলতে সমর্থ ?
অর্থ: এছাড়া অন্যেরা পরম্পরা ধারায় শ্রবণ করে তার লেশ মাত্র কীর্তন করে থাকেন৷ আমি ব্যাসদেবের কাছে যেভাবে শ্রবণ করেছি তারই কিঞ্চিৎ এখানে বলছি ৷
অর্থ: এই গীতোপনিষদ্ ভগবদ্ গীতা সমস্ত উপনিষদের সারাতিসার এবং তা ঠিক একটি গাভীর মতো এবং রাখাল বালকরূপে প্রসিদ্ধ ভগবান শ্রীকৃষ্ণই এই গাভীকে দোহন করেছেন৷ অর্জুন যেন গোবৎসের মতো এবং জ্ঞানীগুণী ও শুদ্ধ ভক্তেরাই ভগবদ্ গীতার সেই অমৃতময় দুগ্ধ পান করে থাকেন৷
অর্থ: যে কৃষ্ণ অর্জুনের সারথ্য স্বীকার করে ত্রিলোকের উপকারের জন্যে এই গীতামৃত প্রদান করেছেন, আমি প্রথমেই সেই শ্রীকৃষ্ণকে প্রণাম জানাই৷
অর্থ: যে ব্যক্তি ঘোর সংসার-সাগর উত্তীর্ণ হতে চান, তিনি গীতারূপ নৌকার আশ্রয়ে সুখেই পার হতে পারেন৷
অর্থ: গীতাজ্ঞান শ্রবণ না করেই যে মূঢ়াত্মা সর্বদা অভ্যাস যোগে মোক্ষলাভ করতে চায়, তাকে বালকেরাও উপহাস করে৷
অর্থ: যাঁরা অহর্নিশ গীতাশাস্ত্র শ্রবণ বা পাঠ করেন, তাঁরা কথনই সাধারণ মানুষ নন, তাঁরা নিশ্চিত দেবতুল্য, এতে সংশয় নেই৷
অর্থ: ভগবান কৃষ্ণচন্দ্র গীতাজ্ঞান দ্বারা অর্জুনের সম্বোধনার্থ সগুণ ও নির্গুণ পরম ভক্তিতত্ত্ব কীর্তন করেছিলেন৷
অর্থ: এভাবে ভোগ ও মোক্ষ নিরাকৃত অষ্টাদশ অধ্যায় সোপান বিশিষ্ট গীতাজ্ঞান দ্বারা চিত্ত শুদ্ধ হয় এবং ক্রমশ প্রেমভক্তিতে অধিকার জন্মে৷
অর্থ: এই গীতারূপ সলিলে স্নান করে সাধুব্যক্তিরা সংসার মল মুক্ত হন৷ কিন্তু শ্রদ্ধাহীন জনের সেই স্নান হস্তিস্নানের মতো বৃথা হয়ে থাকে৷
অর্থ: যে ব্যক্তি গীতার পঠন পাঠন কিছু জানে না, সেই ব্যক্তি মানব সমাজে অনর্থ কর্মকারী৷
অর্থ: অতএব গীতাতত্ত্ব যে জানে না, তার থেকে অধম ব্যক্তি আর কেউ নেই৷ তার কুল, শীল, বিজ্ঞান ও মনুষ্যদেহে ধিক্ ৷
অর্থ: যে গীতার অর্থ জানে না, তার থেকে অধম আর নেই৷ তার সুন্দর দেহ, তার চরিত্র, তার বৈভব, তার গৃহ আশ্রম সবই ধিক্৷
অর্থ: যে ব্যক্তি গীতাশাস্ত্র জানে না, তার অপেক্ষা অধম জন আর নেই, তার প্রারব্ধ কর্মে ধিক্, তার প্রতিষ্ঠায় ধিক্, তার পূজা, দান, মহত্ত্ব সমস্তই ধিক্৷
অর্থ: গীতাশাস্ত্রে মতিহীন ব্যক্তির সমস্তই নিষ্ফল বলে কথিত হয়৷ তার জ্ঞানদাতাকে ধিক্, তার ব্রতে ধিক্, তার নিষ্ঠায় ও তপস্যায় ধিক্, তার যশেও ধিক্৷
অর্থ: যে ব্যক্তি গীতার্থ আলোচনা করে না, তার চেয়ে অধম আর নেই৷ যে জ্ঞান গীতায় গীত হয় নি, সেই জ্ঞান নিষ্ফল, সেই জ্ঞান ধর্মরহিত, সেই জ্ঞান বেদ-বেদান্ত গর্হিত এবং অসুর সম্মত জ্ঞান বলে জানবে৷
অর্থ: অতএব গীতাই ধর্মময়ী সর্বজ্ঞান-প্রযোজিকা এবং সর্বশাস্ত্রসার-ভূতা বিশুদ্ধা বলে সর্বত্র সর্বকালে সমাদৃতা৷
অর্থ: যে ব্যক্তি বিষ্ণুপর্বদিনে বিশেষত শ্রীহরিবাসর তিথি একাদশীতে গীতা অধ্যয়্ন করেন, তিনি নিদ্রিত বা জাগ্রত অবস্থায় গমন বা অবস্থান কালে কখনই শত্রু দ্বারা পরাভূত হন না ৷
অর্থ: যিনি শালগ্রামশিলার সাম নে, দেবাগারে বা শিবালয়ে, তীর্থে ও নদীতটে গীতা পাঠ করেন, তিনি নিশ্চিত সৌভাগ্য লাভের অধিকারী হন৷
অর্থ: দেবকীনন্দন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতাপাঠে যে প্রকার তুষ্ট হন, বেদ অধ্যায়্ন, দান, যজ্ঞ, তীর্থভ্রমণ বা ব্রত ইত্যাদি দ্বারাও সে প্রকার সন্তুষ্ট হন না৷
অর্থ: যিনি ভক্তিভাবিত চিত্তে গীতা অধ্যয়্ন করেন, বেদ পুরাণাদি সমস্ত শাস্ত্রই সর্বতোভাবে তাঁর অধ্যয়্ন করা হয়ে যায়৷
অর্থ: যোগস্থানে, সিদ্ধপীঠে, শালগ্রাম সম্মুখে, সজ্জন সভায়, যজ্ঞে বিশেষত বৈষ্ণবের কাছে গীতাপাঠ করলে পরমা সিদ্ধি লাভ হয়৷
অর্থ: যিনি প্রত্যহ গীতা পাঠ ও শ্রবণ করেন তাঁর সদক্ষিণা অশ্বমেধাদি যজ্ঞ ফল স্বাভাবিকভাবেই লাভ হয়৷
অর্থ: যিনি যত্ন সহকারে গীতার্থ শ্রবণ-কীর্তন বা অন্যকে শ্রবণ করান, তিনি পরমপদ বৈকুণ্ঠ লাভ করেন৷
অর্থ (২৭-২৮): যে ব্যক্তি সাদরে ভক্তিভাবে বিধিপূর্বক বিশুদ্ধ গীতা পুস্তক কাউকে অর্পণ করে, তাঁর ভার্যা প্রিয়া হয়৷ এবং তিনি য্শ, সৌভাগ্য, আরোগ্য লাভ করেন৷ এতে সন্দেহ নেই৷ অধিকন্তু প্রিয়্জনের অতি প্রিয় হয়ে তিনি পরম সুখ ভোগ করেন৷
অর্থ (২৯-৩১): যে গৃহে গীতা অর্চিত হয়ে থাকে সেখানে কখনও অভিশাপ বা অভিচার উদ্ভূত দুঃখ প্রবেশ করতে পারে না ৷ কখনও সেখানে ত্রিতাপ ক্লেশ, শাপ, পাপ, দুর্গতি বা নরকভয় থাকে না ৷ কখনও বিস্ফোটকাদি পীড়া দেহে জন্মে না ৷ সেখানকার জনগণ শ্রীকৃষ্ণপাদপদ্মে অব্যভিচারিণী দাস্য-ভক্তি লাভ করেন ৷
অর্থ: গীতা অনুশীলনরত ব্যক্তি প্রারব্ধ ফল ভোগ করলেও সমস্ত জীবের সংগে তাঁর সখ্যভাব উৎপন্ন হয় ৷ সে ব্যক্তি মুক্ত ও সুখী ৷ এ জগতে কর্ম করেও তিনি কর্মে লিপ্ত হন না ৷
অর্থ:গীতা অধ্যয়নকারী ব্যক্তি হঠাৎ মহাপাপ, অতিপাপ করে ফেললেও সেই সব পাপ তাঁকে পদ্মপত্রজলের মতো বিন্দুমাত্র স্পর্শ করতে পারে না ৷
অর্থ (৩৪-৩৫): অনাচার-উদ্ভূত পাপ বা অবাচ্য-কথন পাপ, অভক্ষ্য-ভক্ষণ দোষ এবং জ্ঞান-অজ্ঞানকৃত দৈনন্দিন ইন্দ্রিয়জ সমস্ত প্রকার পাপই গীতাপাঠে সদ্য বিনষ্ট হয় ৷
অর্থ:সর্বত্র ভোজন বা সর্বতোভাবে প্রতিগ্রহণ করলেও প্রকৃষ্টরূপে গীতাপাঠকারী সর্বদা তাতে নির্লিপ্ত থাকেন ৷
অর্থ: এমন কি অবিধিপূর্বক রত্নপূর্ণা সসাগরা ধরিত্রী প্রতিগ্রহকারীও একবার গীতাপাঠেই শুদ্ধ স্ফটিকের মতো নির্মল হয়৷
অর্থ (৩৮-৩৯): যাঁর অন্তঃকরণ সদা সর্বদা গীতাতেই নিবিষ্ট, তিনিই প্রকৃষ্ট সাগ্নিক, সর্বদা জপী, ক্রিয়াবান, এবং তিনিই প্রকৃত পণ্ডিত৷ তিনিই দর্শণীয়, তিনিই ধনবান, তিনিই যোগী বা প্রকৃত জ্ঞানবান এবং তিনিই যাজ্ঞিক, যাজনকারী এবং তিনিই সর্ব বেদার্থ দর্শক৷
অর্থ:যেখানে নিত্য গীতা পুস্তক অবস্থান করে, এ জগতে সেখানে প্রয়াগাদি সর্ব তীর্থ সর্বদা অবস্থান করেন৷
অর্থ: সর্বদা গীতা অধ্যায়্নকারীর দেহে, বা দেহত্যাগের পরও দেহরক্ষক রূপে দেবতা, ঋষি বা যোগীরা অবস্থান করেন৷
অর্থ:যেখানে গীতা বর্তমান থাকেন, সেখানে নারদ, ধ্রুব আদি পার্ষদবৃন্দসহ স্বয়ং বালগোপাল শ্রীকৃষ্ণ সহায়-রূপে আবির্ভূত হন৷
অর্থ: যে স্থানে গীতা শাস্ত্রের বিচার এবং পঠন পাঠন হয়, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সে স্থানে শ্রীরাধিকার সঙ্গে পরমানন্দে বিরাজ করেন৷
অর্থ:শ্রীভগবান বললেন,- হে পার্থ ! গীতা আমার হৃদয়, গীতা আমার উত্তম সার-স্বরূপ, গীতা আমার অত্যুগ্র জ্ঞান এবং গীতাই আমার অব্যয়-জ্ঞান ৷
অর্থ:গীতা আমার উত্তম স্থান, গীতা আমার পরম পদ, গীতা আমার পরম গোপনীয় বস্তু, বিশেষ কি গীতাই আমার পরম গুরু৷
অর্থ:গীতার আশ্রয়েই আমি বর্তমান আছি, গীতাই আমার পরম গৃহ৷ এই গীতাজ্ঞানকে সম্যকভাবে আশ্রয় করেই আমি ত্রিলোক পালন করে থাকি৷
অর্থ: অর্ধমাত্রা-স্বরূপা নিত্য অনির্বাচ্যপদাত্মিকা গীতাই আমার ব্রহ্মরূপা পরাবিদ্যা- তা নিঃসংশয়ে জানবে৷
অর্থ:হে পাণ্ডব ! গীতার যে নামসমূহ কীর্তনের দ্বারা তৎক্ষণাৎ সমস্ত পাপ ধ্বংস হয়, সেই গোপনীয় নাম সকল বলছি, শ্রবণ কর৷
অর্থ (৪৯-৫১): গঙ্গা, গীতা, সাবিত্রী, সীতা, সত্যা, পতিব্রতা, ব্রহ্মাবলী, র্ব্রহ্মবিদ্যা, ত্রিসন্ধ্যা, মুক্তিগেহিনী, অর্ধমাত্রা, চিদানন্দা, ভবঘ্নী, ভ্রান্তি-নাশিনী, বেদত্রয়ী, পরানন্দা, তত্ত্বার্থজ্ঞানমঞ্জরী- যে মানুষ অচঞ্চলচিত্তে এই গুপ্ত নাম সমূহ নিত্য জপ করেন, তিনি দিব্যজ্ঞান-সিদ্ধি লাভ করেন এবং অন্তে পরমপদ প্রাপ্ত হন৷
অর্থ: সম্পূর্ণ গীতাপাঠে অসমর্থ হলে তার অর্ধাংশ পাঠ করবে৷ তাতে নিঃসন্দেহে গো-দান জনিত পুণ্য লাভ হবে৷
অর্থ: এক-তৃতীয়াংশ গীতা পাঠে সোম-যজ্ঞের ফল এবং এক-ষষ্ঠাংশ জপে গঙ্গাস্নান ফল লাভ করবে৷
অর্থ: যিনি নিষ্ঠাসহকারে নিত্য গীতার দুটি অধ্যায় পাঠ করেন, তিনি নিঃসন্দেহে ইন্দ্রলোক লাভ করে সেখানে কল্পকাল বাস করেন৷
অর্থ: যিনি ভক্তি সহ্কারে দৈনিক একটি অধ্যায় পাঠ করেন, তিনি চির কালের জন্য রুদ্রগণে পরিগণিত হয়ে রুদ্রলোক লাভ করেন৷
অর্থ:যে ব্যক্তি অর্ধ-অধ্যায় বা এক-চতুর্থাংশ নিত্য পাঠ করেন, তিনি শতমন্বন্তর সমকাল রবিলোক প্রাপ্ত হন৷
অর্থ: যে ব্যক্তি এই গীতার দশটি বা সাতটি বা পাঁচটি বা তিনটি বা দুটি বা একটি বা অর্ধশ্লোকও শ্রদ্ধাসহকারে পাঠ করেন, তিনি চন্দ্রলোক প্রাপ্ত হয়ে সেখানে অযুতবর্ষকাল বাস করেন৷
অর্থ: যিনি গীতার অর্ধভাগ, একপাদ, বা একটি অধ্যায় বা শ্লোকও স্মরণ করতে করতে দেহ ত্যাগ করেন, তিনি পরমপদ লাভ করেন৷
অর্থ:মৃত্যুকালে গীতার্থ পাঠ বা শ্রবণ করে মহাপাতকযুক্ত ব্যক্তিও মুক্তিভাগী হয়৷
অর্থ:যিনি গীতাপুস্তক-সংযুক্ত হয়ে দেহ্ত্যাগ করেন, তিনি বৈকুণ্ঠ লাভ করে ভগবান বিষ্ণুর সঙ্গে আনন্দে বিরাজ করেন৷
অর্থ: গীতার একটি অধ্যায় সমাযুক্ত হয়ে মৃত্যু হলে, পুনরায় সে মনুষ্যজন্ম লাভ করে গীতাভ্যাসের দ্বারা উত্তমা-মুক্তি লাভ করেন৷
অর্থ: গীতা এই শব্দ উচ্চারণের সঙ্গে মৃত্যু হলেও সদ্ গতি লাভ হয়৷
অর্থ:যে সমস্ত কর্ম গীতাপাঠ সহকারে অনুষ্ঠিত হয়, সে সমস্তই নির্দোষ হয়ে পূর্ণত্ব লাভ করে৷
অর্থ:পিতৃগণের উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি শ্রাদ্ধে গীতাপাঠ করেন, তাঁর পিতৃগণ সন্ত্তষ্ট হন ও নরক থেকে স্বর্গে গমন করেন৷
অর্থ: শ্রাদ্ধকালে গীতাপাঠ দ্বারা শ্রাদ্ধতর্পিত পিতৃগণ, সেই পুত্রকে আশীর্বাদ করতে করতে পিতৃলোক গমন করেন৷
অর্থ:চামর সমন্বিত গীতাগ্রন্থ দান করলে সেই দিনেই মানুষ সম্যক্ ভাবে কৃতার্থতা লাভ করে৷
অর্থ:পণ্ডিত ব্রাহ্মণকে যিনি সুবর্ণ সংযুক্ত গীতা দান করেন, তাঁর আর জন্ম হয় না৷
অর্থ:যিনি একশতখানি গীতা দান করেন, তিনি পুনরাবৃত্তিদুর্লভ ব্রহ্মধামে গমন করেন৷
অর্থ:গীতাদান-প্রভাবে সপ্ত-কল্পকাল যাবৎ বিষ্ণুলোকে স্থান লাভ করে জীব পরমানন্দে বিষ্ণুর সঙ্গে বাস করেন৷
অর্থ:যিনি গীতার্থ সম্যকভাবে শ্রবণ করে সেই পুস্তক ব্রাহ্মণকে দান করেন, শ্রীভগবান প্রীত হয়ে তাঁর মনোঅভীষ্ট পূরণ করেন৷
অর্থ:যে ব্যক্তি অমৃতরূপিণী গীতা পাঠ বা শ্রবণ না করে, সে হ্স্তস্থিত অমৃত পরিত্যাগ করে বিষ ভক্ষণ করে৷
অর্থ:মরজগতে সংসার-দুঃখার্তজন গীতাজ্ঞান লাভ করে ও গীতামৃত পান করে ভগবদ্-ভক্তির আশ্রয় লাভ করে ও সুখী হয়৷
অর্থ: জনকাদি বহু রাজর্ষি গীতা-জ্ঞান আশ্রয়েই নিষ্পাপ থেকে পরমপদ লাভ করেছেন৷
অর্থ: গীতাপাঠে উচ্চ-নীচ কুলের বিচার নাই৷ শ্রদ্ধালু মাত্রেই গীতাপাঠের অধিকারী৷ যেহেতু সমগ্র জ্ঞানের মধ্যে গীতাই ব্রহ্মস্বরূপিণী৷
অর্থ:যে ব্যক্তি অভিমান বা গর্বভরে গীতার নিন্দা করে, সে মহাপ্রলয় কাল পর্যন্ত ঘোর নরকে বাস করে৷
অর্থ:যে মূঢ়াত্মা অহঙ্কারে স্ফীত হয়ে গীতার্থ অবমাননা করে, সে কল্পক্ষয় কালপর্যন্ত কুম্ভীপাক নরকে পচতে থাকে৷
অর্থ:সম্যক রূপে গীতার অর্থ কীর্তন করলেও যে ব্যক্তি তা শ্রবণ করে না, সে পুনঃ পুনঃ শূকরযোনি প্রাপ্ত হয়৷
অর্থ:গীতা-পুস্তক যে ব্যক্তি চুরি করে আনে, তার কিছুই সফল হয় না, এবং পাঠও বৃথা হয়ে যায়৷
অর্থ:যে ব্যক্তি গীতা শ্রবণ করেও পরমার্থত আনন্দ পায় না, পাগলের পরিশ্রমের মতো সে কোন ফলই পায় না৷
অর্থ: ভগবানের প্রীতির জন্য গীতা শ্রবণ করে সুবর্ণ, ভোজ্য, পট্টবস্ত্র বৈষ্ণব ব্রাহ্মণকে নিবেদন করা কর্তব্য৷
অর্থ:ভগবান শ্রীহরির প্রীতির জন্য গীতা পাঠককে বহুপ্রকার দ্রব্য বস্ত্রাদি উপচার-দ্বারা ভক্তিপূর্বক পূজা করা উচিত৷
অর্থ:সুত গোস্বামী বললেন- ভগবান শ্রীকৃষ্ণ-কথিত এই সনাতন গীতামাহাত্ম্য, যিনি গীতাপাঠান্তে পাঠ করেন, তিনি যথোক্ত ফলভাগী হন৷
অর্থ:গীতাপাঠ করে যিনি মাহাত্ম্য পাঠ না করেন, তাঁর পাঠফল বৃথা, পণ্ডশ্রম হয়৷
অর্থ: মাহাত্ম্য-সংযুক্তং গীতা যিনি শ্রদ্ধাপূর্বক পাঠ বা শ্রবণ করেন, তিনি পরমাগতি প্রাপ্ত হন ৷
অর্থ:যে ব্যক্তি শ্রদ্ধাপূর্বক অর্থযুক্ত গীতা শ্রবণ করে গীতা-মাহাত্ম্য শ্রবণ করেন, ইহলোকে তাঁর পুণ্যফল সর্বসুখের কারণ হয়ে থাকে৷
শ্রীশঙ্করাচার্য প্রণীত গীতা-মাহাত্ম্য
অর্থ: শ্রীমদ্ভগবদ্ গীতার নির্দেশকে য্থাযথভাবে অনুসরণ করতে পারলে, অতি সহজেই সমস্ত ভয় ও উদ্বেগ থেকে মুক্ত হওয়া যায় ৷ এই জীবনে ভয় ও শোকাদি বর্জিত হয়ে পরবর্তী জীবনে চিন্ময় স্বরূপ অর্জন করা যায় ৷
অর্থ: কেউ যদি আন্তরিকভাবে এবং অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে ভগবদগীতা পাঠ করে, তাহলে ভগবানের করুণায় তার অতীতের সমস্ত পাপ কর্মের ফল তাকে প্রভাবিত করে না ৷
অর্থ: প্রতিদিন জলে স্নান করে মানুষ নিজেকে পরিচ্ছন্ন করতে পারে, কিন্তু কেউ যদি ভগবদ্ গীতার গংগাজলে একটি বারও স্নান করে, তাহলে তার জড় জীবনের মলিনতা একেবারেই বিনষ্ট হয়ে যায়৷
অর্থ: যেহেতু ভগবদ্ গীতার বাণী স্বয়ং পরম পুরুষোত্তম ভগবানের মুখনিঃসৃত বাণী, তাই এই গ্রন্থ পাঠ করলে আর অন্য কোন বৈদিক সাহিত্য পড়বার দরকার হয় না৷ গভীর নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে নিয়মিতভাবে ভগবদ্ গীতা শ্রবণ ও কীর্তন করলে আমাদের অন্তর্নিহিত ভগবদ্ভক্তির স্বাভাবিক বিকাশ হয়৷ বর্তমান জগতে মানুষেরা নানা রকম কাজে এতই ব্যস্ত থাকে যে, তাদের পক্ষে সমস্ত বৈদিক সাহিত্য পাঠ করা সম্ভব নয়৷ সমস্ত বৈদিক সাহিত্য পড়বার প্রয়োজনও নেই৷ এই একটি গ্রন্থ ভগবদ্ গীতা পাঠ করলেই মানুষ সমস্ত বৈদিক জ্ঞানের সারমর্ম উপলব্ধি করতে পারবে, কারণ ভগবদ্ গীতা হচ্ছে বেদের সার এবং এই গীতা স্বয়ং ভগবানের মুখনিঃসৃত উপদেশ বাণী৷
অর্থ: গঙ্গাজল পান করলে অবধারিত ভাবে মুক্তি পাওয়া যায়, আর যিনি ভগবদ্ গীতার পুণ্য পীযুষ পান করেছেন, তাঁর কথা আর কি বলবার আছে? ভগবদ্ গীতা হচ্ছে মহাভারতের অমৃত রস, যা আদিবিষ্ণু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজেই বলে গেছেন৷ ভগবদ্ গীতা পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত, আর গঙ্গা ভগবানের চরণপদ্ম থেকে উদ্ভূত বলে উল্লেখ করা হয়েছে৷ ভগবানের মুখ ও পায়ের মধ্যে অবশ্য কোন পার্থক্য নেই৷ তবে আমাদের এটি বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, ভগবদ্ গীতার গুরুত্ব গঙ্গার চেয়েও বেশি৷
অর্থ: এই গীতোপনিষদ্ ভগবদ্ গীতা সমস্ত উপনিষদের সারাতিসার এবং তা ঠিক একটি গাভীর মতো এবং রাখাল বালকরূপে প্রসিদ্ধ ভগবান শ্রীকৃষ্ণই এই গাভীকে দোহন করেছেন৷ অর্জুন যেন গোবৎসের মতো এবং জ্ঞানীগুণী ও শুদ্ধ ভক্তেরাই ভগবদ্ গীতার সেই অমৃতময় দুগ্ধ পান করে থাকেন৷
অর্থ: বর্তমান জগতে মানুষ আকুল ভাবে আকাংক্ষা করছে একটি শাস্ত্রের, একক ভগবানের, একটি ধর্মের এবং একটি বৃত্তির৷ তাই, একং শাস্ত্রং দেবকীপুত্রগীতম্- সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য সেই একক শাস্ত্র হোক ভগবদ্ গীতা৷ একো দেবো দেবকীপুত্র এব- সমগ্র বিশ্বচরাচরের একক ভগবান হোন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ৷ একো মন্ত্রস্তস্য নামানি- একক মন্ত্র, একক প্রার্থনা, একক স্তোত্র হোক তাঁর নাম কীর্তন-হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে৷
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে॥এবং কর্মাপ্যেকং তস্য দেবস্য সেবা- সমস্ত মানুষের একটিই বৃত্তি হোক- পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবা করা৷
শ্রীল ব্যাসদেব কৃত গীতা-মাহাত্ম্য
অর্থ (১-২): গীতা স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের মুখপদ্ম থেকে নিঃসৃত হয়েছেন ৷ সেই গীতা সুন্দরভাবে পাঠ করতে হবে৷ অন্যান্য বহু রকমের শাস্ত্রের প্রয়োজন নেই৷ যেহেতু শ্রীভগবদ্ গীতা সর্বশাস্ত্রময়ী, সর্বদেবময়ী, সুতরাং গীতা অভ্যাস করা একান্ত কর্তব্য৷
অর্থ (৩-৫): যিনি শাল গ্রাম শিলার সামনে গীতাধ্যায় পাঠ করেন, তিনি সহস্র মন্বন্তর ব্রহ্মলোকে বাস করেন৷ যদি কোন ব্যক্তি বারংবার জগৎ নাশ বা চৌর্য-কর্ম করে, এমন জনও গীতাধ্যায়ী হলে কোন প্রকার পাপে লিপ্ত হ্য় না ৷উপরন্তু তিনি সর্বজ্ঞ হন এবং দ্শহাজার গো-দানের ফল লাভ করেন৷প্রত্যহ গীতাধ্যায়ী ব্যক্তি অভয়্পদ প্রাপ্ত হন ৷
অর্থ: যিনি গীতার একটি অধ্যায়, একটি শ্লোক কিংবা অর্ধ শ্লোক মাত্র পাঠ করেন, তিনি সংসার-পাপ থেকে মুক্ত হয়ে বিষ্ণুধামে গমন করেন৷
অর্থ (৭-৯): যে ব্রাহ্মণ শ্রীভগবদ্ গীতার শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপ নামক একাদ্শ অধ্যায় ও বিভূতিযোগ নামক দশম অধ্যায় নিত্য পাঠ করেন, আমি এখন তাঁর পুণ্যের কথা বলছি৷সমগ্র বেদ, ইতিহাস, পুরাণ অধ্যায়্ন করলে যে পুণ্য হয় এক শ্লোকেই সেই পুণ্য হয়ে থাকে৷ যিনি প্রতিদিন বিশ্বরূপ ও বিভূতিযোগ নামক অধ্যায় পাঠ করেন তিনি আব্রহ্ম স্তম্ভ পর্যন্ত জগতের প্রীতি সাধন করেন৷
অর্থ (১০-১২): কেশব প্রত্যহ গীতাধ্যায়ী ব্যক্তির বত্রিশ প্রকার অপরাধ ক্ষমা করেন৷ যিনি গীতাশাস্ত্র লিখে বৈষ্ণবকে প্রদান করেন তিনি প্রত্যহ শ্রীহরিপূজার ফল প্রাপ্ত হন সন্দেহ নেই৷ বিষ্ণু চারি বেদের সার উদ্ধার করে ত্রিভুবনের উপকারের জন্য এই গীতাশাস্ত্র প্রকাশ করেছেন৷
অর্থ (১৩-১৪): মহাভারতের সারসুধা, বিষ্ণুমুখনির্গত গীতারূপ গঙ্গাবারি পান করলে পুনর্জন্ম হয় না৷ চতুর্বর্গ ফলাভিলাষী ব্যক্তির প্রত্যহই কৃষ্ণমুখোবিনির্গত গীতা শ্রবণ ও পাঠ করা কর্তব্য৷
অর্থ: যিনি নিত্যই গীতা পাঠ করেন, তিনি সবরকমের পাপ থেকে মুক্ত হয়ে শ্রীবিষ্ণুর পরম ধামে গমন করেন৷