সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শঙ্খ কি? কেনো বাড়িতে শঙ্খ থাকা বাধেও?

শঙ্খ একটি সামুদ্রিক প্রাণী ৷ বেদে এর উল্লেখ আছে ৷ হিন্দুশাস্ত্রে শাঁখ বিষ্ণুর প্রতীক ৷ বিশ্বাস করা হয়, শাঁখের শব্দ সবরকম নেতিবাচক শক্তিকে নষ্ট করতে পারে ৷ হিন্দু পুরাণে বিষ্ণুর একাধিক রূপের কথা উল্লেখ আছে ৷ প্রতিক্ষেত্রেই উল্লেখ আছে শঙ্খের কথা ৷ প্রতিবারই নেতিবাচক শক্তির বিরুদ্ধে বেজে উঠেছে সেই শাঁখ ৷ এটি বিষ্ণুর পবিত্র প্রতীক ৷ সনাতন ভারতের অন্যতম মঙ্গলচিহ্ন শঙ্খ বা শাঁখ। বৈদিক যুগ থেকে আজ পর্যন্ত ভারতীয় হিন্দুগৃহে শাঁখের অবস্থিতি অবিচল। শঙ্খ ভগবান বিষ্ণুর চিহ্ন। তাই শঙ্খও পূজনীয়। তা ছাড়া প্রাচীন কালে যুদ্ধ আরম্ভ হতো শাঁখ বাজিয়ে, এ কথা ‘মহাভারত’-এও উল্লিখিত। আজও ভূমিকম্প ঘটলে, বা কোনও দুর্যোগ ঘটলে শাঁখের আওয়াজ ভেসে আসে প্রায় প্রতিটি পরিবার থেকে। আবার বিবাহাদি শুভকাজেও শঙ্খধ্বনি অপরিহার্য। বৌদ্ধধর্মেও শঙ্খ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সদাব্যস্ত শহুরে জীবনে শাঁখ এখন ঘরের কোণে স্থান পাওয়া একটা সামগ্রী মাত্র ৷ প্রতিদিনের তাড়াহুড়োয় সন্ধ্যাপ্রদীপ দেওয়ার সময় হয় না, তায় আবার শঙ্খধ্বনি ৷ শুধু পুজোতেই নিয়মমাফিক শাঁখের উপস্থিতি দেখা যায় ৷ তারপর আবার তা হারিয়ে যায় ৷ কিন্তু বাস্তশাস্ত্র বলছে, শাঁখ বাড়িতে রাখা উচিত ৷

শাঁখ বাজানোর প্রয়োজনীয়তা কি?

এখনও সন্ধেবেলায় শাঁখ বাজানোর প্রথা প্রচলিত রয়েছে হিন্দু সমাজে৷ এটা কি নিছক ধর্মীয় বিষয় না এর পিছনে কোনও বিজ্ঞানসম্মত কোনও কারণ আছে কি? এমন প্রশ্ন মাঝে মাঝেই উঠে থাকে৷ সেক্ষেত্রে বলা দরকার বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছে

  • শাঁখের আওয়াজে বিভিন্ন ইনফেকটিভ ব্যাকটেরিয়া রোগ সংক্রমণ জীবাণু ধ্বংস হয়৷ ফলে সন্ধের সময় মাটির কাছাকাছি অঞ্চলে যে সমস্ত জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায় অথবা বহুদূরে চলে যায়, ফলে এলাকাটি জীবাণু মুক্ত থাকে৷
  • এছাড়া শাঁখের আওয়াজ মশার উপদ্রব কমে যায়৷
  • তাছাড়া যিনি শাঁখ বাজান তাঁর হৃৎযন্ত্রটি সবল থাকে বলেও লক্ষ্য করা গিয়েছে৷
  • শঙ্খ আহ্বান করে সুখ-সমৃদ্ধিকে।
  • শঙ্খের আওয়াজ নেগেটিভ এনার্জিকে দূরে সরিয়ে পজিটিভ এনার্জিকে ঘরে নিয়ে আসে।
  • শঙ্খে বাস করে ভগবান বিষ্ণু। আর সংসারে বিষ্ণুর আধিপত্য থাকলেই আসবে সুখ সমৃদ্ধি।
  • শঙ্খ বাজালে বাড়িতে যদি কোনও প্রকার অশুভ শক্তি থাকে, তার প্রভাব ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এর মাধ্যমে শুভ শক্তিকে আহ্বান করা হয়,
  • পরিবারের সকলের মন ও স্বাস্থ্য ভাল থাকে।
  • সাধারণত যে বাড়িতে শঙ্খ বাজানো হয় সেই বাড়ি সদা বিপদ মুক্ত থাকে।
  • ভাগ্য ও আর্থিক উন্নতির জন্য শঙ্খের ব্যবহার অপরিহার্য।

বাড়িতে শাঁখ সঠিক নিয়মে রেখেছেন তো? না হলে বড় ক্ষতি হতে পারে!

শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্ম ধারণকারী শ্রীবিষ্ণুর অন্যতম অস্ত্র হল শাঁখ। শঙ্খের ধ্বনির দ্বারাই বারবার অশুভ শক্তির বিনাশ করেছেন তিনি। তাই হিন্দু ধর্মে শঙ্খের গুরুত্ব অপরিসীম। শুধু হিন্দু ধর্ম নয়, বৌদ্ধ ধর্মেও শাঁখের ব্যবহার রয়েছে। শঙ্খে ফুঁ দিলে তাতে যে তরঙ্গের সৃষ্টি হয় তা থেকে অশুভ শক্তি দূর হয় বলে ধর্মীয় বিশ্বাস। তাই তো হিন্দুদের সব পুজোতেই শঙ্খ বাজানোর রেওয়াজ আছে। বৈদিক মতে শঙ্খ দু’প্রকারের হয়। একটি পুজোর কাজে ব্যবহার করা হয় এবং অন্যটি বাজানো হয়। নিয়ম অনুসারে গৃহস্থ বাড়িতে অন্তত দু’বার শঙ্খ বাজাতে হয়— একবার সকালে ও একবার বিকেলে।

শঙ্খ একাধারে বাদ্য এবং পূজ্য। পরম্পরা অনুযায়ী, নিয়মিত শাঁখ বাজালে অশুভশক্তি দূরে যায়, হৃৎপিণ্ডও সবল হয়। এই সব কারণে গৃহে শাঁখ রাখা প্রয়োজন। শঙ্খকে যেমন-তেমন ভাবে রাখা বিধেয় নয়। বৈদিক বাস্তুশাস্ত্র জানাচ্ছে, ঠিক কী প্রক্রিয়ায় শঙ্খকে গৃহে রাখলে সর্বাধিক মঙ্গল সম্ভব। জেনে নিন কী ভাবে বাস্তু মেনে শঙ্খ রাখতে হয়—

  • যে শঙ্খ বাজানো হয়, তাতে জল দিয়ে ঠাকুরের কাছে রাখা যাবে না। এই শঙ্খ হলুদ কাপড়ে মুড়ে রাখতে হয়।
  • শঙ্খকে রাখতে হবে উঁচুতে। মাটিতে কখনওই নয়।
  • বাজানোর শঙ্খটিকে পুজোর কাজের শঙ্খের থেকে একটু ওপরে স্থাপন করতে হবে।
  • বাড়িতে অন্তত দু’টি শঙ্খ রাখতে হবে এবং এই শঙ্খ দু’টিকে পরস্পরের থেকে দূরে রাখতে হবে।
  • একই কাজে ব্যবহার করা দু’টি শঙ্খ কখনওই এক ঘরে রাখবেন না।
  • শাঁখ এবং শিবলিঙ্গ যেন কখনও স্পর্শ না করে। শিবলিঙ্গের থেকে শঙ্খ সব সময় নীচে রাখতে হবে।
  • জল শঙ্খ সব সময় সাদা কাপড়ে মুড়ে রাখা বাস্তু বিধেয়।
  • সূর্যদেব ও মহাদেবের পুজোয় কখনও জল শঙ্খের জল অর্পণ করতে নেই।
  • শঙ্খ নিয়মিত বাজালে হার্টের সমস্যা কম হয়।
  • গৃহে রাখা শঙ্খের উপাসনা নিয়মিত করা প্রয়োজন। ভোর ও সন্ধ্যায় এই উপাসনা বিধেয়।
  • শঙ্খ পরিষ্কার করার জন্য গঙ্গাজলই সর্বোৎকৃষ্ট। তার পরে তাকে সাদা কাপড়ে মুছে নেওয়া কর্তব্য।
  • যে শাঁখকে পূজা করা হবে, সেটি না বাজানোই বিধেয়। আর বাজানোর জন্য রাখা শাঁখটিকে পূজা না করাই উচিত।

শঙ্খ কেন তিন বারের বেশি বাজাতে নেই এবং তিন বারের বেশি বাজালে কী হয়?

হিন্দু শাস্ত্র মতে প্রত্যেক হিন্দু বাড়িতেই শঙ্খ বাজানো হয়। এই রীতি হিন্দু ধর্মের বিশেষ প্রচলিত এক রীতি এবং এই রীতি প্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রতি দিন সন্ধ্যায় শঙ্খ বাজানো হয়। কিন্তু শাস্ত্র অনুযায়ী প্রতি দিন সকালবেলা পুজো করার পর শঙ্খ বাজালে বিশেষ শুভ ফল লাভ করা যায়। পুজো করার সময় দেবদেবীদের আমন্ত্রণ জানানো হয় এই শঙ্খ বাজানোর মাধ্যমে। যে বাড়িতে নিয়মিত প্রত্যেক দিন শঙ্খ বাজানো হয় সেখানে দেবদেবীর কৃপা বিশেষ ভাবে বর্ষিত হয়। শঙ্খ কেন তিন বারের বেশি বাজাতে নেই? তিন বার শঙ্খ বাজানোর অর্থ হল দেবদেবীকে আমন্ত্রণ জানানো। তিন বার শঙ্খ বাজানোর হয় বিশেষ করে মহাদেব, ব্রহ্মা ও বিষ্ণুদেবকে সন্তুষ্ট করার জন্য। যদি তিন বারের বেশি শঙ্খ বাজানো হয়, তা হলে দেবদেবীরা অসন্তুষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আসুরিক শক্তিকে আহ্বান করা হয়। আসুরিক শক্তির বাড়িতে প্রবেশ মানে অশুভ শক্তির প্রভাব বিস্তার। এর ফলে বাড়িতে নানা রূপ সঙ্কট দেখা দেয়। পরিবারের উপর নানা বিপদের আশঙ্কা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। ধীরে ধীরে আর্থিক অবনতিও শুরু হয়।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ত্রয়োদশ অধ্যায় - ক্ষেত্রক্ষেত্রজ্ঞবিভাগযোগ [সংস্কৃত ও বঙ্গানুবাদ]

ত্রয়োদশ অধ্যায় ক্ষেত্রক্ষেত্রজ্ঞবিভাগযোগ অর্জুন উবাচ প্রকৃতিং পুরুষং চৈব ক্ষেত্রং ক্ষেত্রজ্ঞমেব চ । এতদ্ বেদিতু্মিচ্ছামি জ্ঞানং জ্ঞেয়ং চ কেশব ॥১॥ অনুবাদঃ অর্জুন বলিলেন- হে কেশব! আমি প্রকৃতি, পুরুষ, ক্ষেত্র, ক্ষেত্রজ্ঞ, জ্ঞান ও জ্ঞেয়- এই সমস্ত তত্ত্ব জানতে ইচ্ছা করি। শ্রীভগবানুবাচ ইদং শরীরং কৌন্তেয় ক্ষেত্রমিত্যভিধীয়তে । এতদ্ যো বেত্তি তং প্রাহুঃ ক্ষেত্রজ্ঞ ইতি তদ্বিদঃ ॥২॥ অনুবাদঃ পরমেশ্বর ভগবান বললেন- হে কৌন্তেয় ! এই শরীর ক্ষেত্র নামে অভিহিত এবং যিনি এই শরীরকে জানেন, তাঁকে ক্ষেত্রজ্ঞ বলা হয়। ক্ষেত্রজ্ঞং চাপি মাং বিদ্ধি সর্বক্ষেত্রেষু ভারত । ক্ষেত্রক্ষেত্রজ্ঞয়োর্জ্ঞানং যত্তজ্ জ্ঞানং মতং মম ॥৩॥ অনুবাদঃ হে ভারত ! আমাকেই সমস্ত ক্ষেত্রের ক্ষেত্রজ্ঞ বলে জানবে এবং ক্ষেত্র ও ক্ষেত্রজ্ঞ সম্বন্ধে যে জ্ঞান, সেই জ্ঞানই আমার অভিমত। তৎ ক্ষেত্রং যচ্চ যাদৃক্ চ যদ্বিকারি যতশ্চ যৎ । স চ যো যৎপ্রভাবশ্চ তৎ সমাসেন মে শৃণু ॥৪॥ অনুবাদঃ সেই ক্ষেত্র কি, তার কি প্রকার, তার বিকার কি, তা কার থেকে উৎপন্ন হয়েছে, সেই ক্ষেত্রজ্ঞের স্বরূপ কি এবং তার প্রভাব কি, সেই সব সংক্ষেপে আমার কাছে শ্রবণ কর। ঋষিভির্বহু...

সপ্তদশ অধ্যায় - শ্রদ্ধাত্রয়-বিভাগ-যোগ [সংস্কৃত ও বঙ্গানুবাদ]

সপ্তদশ অধ্যায় শ্রদ্ধাত্রয়-বিভাগ-যোগ অর্জুন উবাচ যে শাস্ত্রবিধিমুৎসৃজ্য যজন্তে শ্রদ্ধয়ান্বিতাঃ।  তেষাং নিষ্ঠা তু কা কৃষ্ণ সত্ত্বমাহো রজস্তমঃ।।১।। অনুবাদঃ  অর্জুন জিজ্ঞাসা করলেন- হে কৃষ্ণ! যারা শাস্ত্রীয় বিধান পরিত্যাগ করে শ্রদ্ধা সহকারে দেব-দেবীর পূজা করে, তাদের সেই নিষ্ঠা কি সাত্ত্বিক, রাজসিক না তামসিক?।

প্রথম অধ্যায় - অর্জুনবিষাদ যোগ [সংস্কৃত ও বঙ্গানুবাদ]

প্রথম অধ্যায় অর্জুন বিষাদ যোগ ধৃতরাষ্ট্র উবাচ ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে সমবেতা যুযুৎসবঃ । মামকাঃ পাণ্ডবাশ্চৈব কিমকুর্বত সঞ্জয় ॥১॥ অনুবাদ : ধৃতরাষ্ট্র জিজ্ঞাসা করলেন- হে সঞ্জয় ! ধর্মক্ষেত্রে যুদ্ধ করার মানসে সমবেত হয়ে আমার পুত্র এবং পান্ডুর পুত্রেরা তারপর কি করল ?